ঘরে বসেই অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট করার নিয়ম | TIN CERTIFICATE

অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট করার নিয়ম জানা থাকলে ঘরে বসেই টিন সাটিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। দৈনন্দিন জীবনে টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজনীয় অপরিসীম। টিন সার্টিফিকেট ছাড়া আয়কর প্রদান করা সহ ব্যবসায়িক লাইসেন্স, গাড়ির মালিকানা গ্রহণ, সম্পত্তি ক্রয়, কোম্পানী খোলা, কোম্পানী শেয়ার ক্রয়, দরপত্র দাখিল ইত্যাদি আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়াদিতে প্রয়োজন। শুধুমাত্র একটিভ মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর দিয়ে অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট করা যায়।

আমাদের এই নিবন্ধে টিন সার্টিফিকেট সংক্রান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন তথ্যাদি আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো।

টিন সার্টিফিকেট কি

নিজেকে একজন করদাতা এবং নিজের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর উল্লেখকৃত সনদই টিন সার্টিফিকেট। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্টান এই টিন সার্টিফিকেটের আইডি নং দিয়ে দিয়ে টিন সার্টিফিকেট যাচাই করে থাকে। টিন নম্বর ১০ ডিজিটের হয়। এই টিন নম্বরের মাধ্যমে করদাতাকে চেনার উপায় হচ্ছে, প্রথম তিনটি সংখ্যা দ্বারা করদাতার কর অঞ্চল, মাঝের তিনটি সংখ্যা দ্বারা সেই করদাতার পদমর্যাদা এবং বাকি চারটি সংখ্যা দ্বারা করদাতার পরিচিতি চিহ্নিত করা হয়।

টিন সার্টিফিকেট করার মানেই কর দিতে হবে এমনটি নয়। আয় যদি করসীমার মধ্যে থাকে তখনি কর পরিশোধ করতে হবে।

বর্তমানে টিন সার্টিফিকেট করতে আয়কর অফিসে বারান্দায় ঘুরতে হয় না। বয়স ১৮ হলেই শুধুমাত্র মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই ই টিআইন সার্টিফিকেট করা যায়।

আয়কর দেয়ার পূর্বশর্ত

টিন সাটিফিকেট থাকলেই আয়কর দিতে হবে না। শুধুমাত্র আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

একজন পুরুষের বাৎসরিক আয় তিন লাখ, সব বয়সের নারী এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে সব নাগরিকের বাৎসরিক আয় সাড়ে তিন লাখ এবং প্রতিবন্ধীদের বাৎসরিক সাড়ে চার লাখ টাকার ওপরে আয় হলে আয়কর দেওয়া বাধ্যতামূলক।

যদি আয় এর কম বা করসীমার নিচে হয়, তাহলে আয়কর দিতে হবেনা। তবে যদি আপনার টিআইএন সার্টিফিকেট থাকে, আপনাকে জিরো রিটার্ণ বা শূন্য বিবরণী জমা দিতে হবে।

টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজনীয়তা

শুধু ব্যবসা বা চাকরী নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের বাধ্যতামূলকভাবে টিআইন সার্টিফিকেট তৈরি করার প্রয়োজন হয়।

  • ব্যবসা শুরু করতে ট্রেড লাইসেন্স নিতে
  • গাড়ির মালিক হতে
  • সিটি করপোরেশনের অঞ্চলে থাকা কোনো জমি, ফ্ল্যাট বা ভবন রেজিস্ট্রেশন করতে
  • ক্রেডিট কার্ড পেতে
  • সঞ্চয়পত্র কিনতে
  • কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনতে
  • নিজের কোম্পানি নিবন্ধন করতে
  • কোনো পণ্য আমদানির লাইসেন্স নিতে
  • আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলীদের পেশার চর্চা করতে
  • নির্বাচনে প্রার্থী হতে
  • ব্যবসায়িক সমিতি বা কোনো নিবন্ধিত সংগঠনের সদস্য হতে
  • সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার দরপত্রে অংশ নিতে
  • রাইড শেয়ারিং কোম্পানিতে গাড়ি দিতে।

উপরোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আয় করসীমার মধ্যে না আসলেও, আপনার বাধ্যতামূলকভাবে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে অনলাইন থেকে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে একটি টিআইন সার্টিফিকেট রেজিস্টেশন করে প্রিন্ট কপি ব্যবহার করতে পারেন।

টিন সার্টিফিকেটের সুবিধা

টিন সার্টিফিকেটের প্রথম সুবিধা হলো, দেশের একজন গর্বিত করদাতা হিসেবে নিবন্ধিত হবেন। আপনার আয়কর দিয়ে দেশের উন্নয়ন অংশিদার হবেন।

এছাড়া টিআইএন থাকার আরো কিছু ব্যক্তিগত সুবিধা রয়েছে যেমন, সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংকে আপনার জমাকৃত অর্থের আয় থেকে ১০% কর কর্তন করা হবে। যদি টিআইএন না থাকে ১৫% কর্তন করা হবে। ব্যাংক ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড নিতে টিআইন সার্টিফিকেট থাকতে হবে। বিভিন্ন সময় সরকার বিভিন্ন পেশাজীবি বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেয়। এসব সুবিধা নিতেও টিআইএন প্রয়োজন হয়।

টিন সার্টিফিকেট এর অসুবিধা

টিন সার্টিফিকেট একটিই অসুবিধা তা হচ্ছে, আপনার করযোগ্য আয় থাক বা না থাক, আপনাকে প্রতি বছর অবশ্যই ট্যাক্স রিটার্ণ দাখিল করতে হবে।

যদি  রিটান জমা না দিলে আপনার ইনকাম কালো টাকা হিসাবে গণ্য হবে। যদি পর পর ৩ বছর আপনার করযোগ্য আয় শুন্য হয় বা আপনার বাৎসরিক আয় করসীমার মধ্যে না আসে, আপনি ৪র্থ বার থেকে রিটার্ণ না দিলে চলবে। তাছাড়া আপনি আপনার আয়কর নিবন্ধন বাতিলের জন্য অবেদন করতে পারবেন।

অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট বের করার নিয়ম

অনলাইনে কিভাবে টিন সার্টিফিকেট বের করা যায়? ঘরে বসেই অনলাইনে টিআইন সার্টিফিকেট ফরম পূরণ করে নিজের ই টিআইন সার্টিফিকেট তৈরী ও ডাউনলোড করতে পারবেন। এছাড়া আপনার যদি পূর্বের টিন থাকে তা দিয়েও নতুন ই-টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। শুধুমাত্র মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয় পত্র থাকলেই অনলাইনে টিআইন সার্টিফিকেট করা যায়।

অনলাইনে ই টিআইএন নিবন্ধন করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

ধাপ ১- একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন

টিআইএন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার জন্য ভিজিট করুন- incometax.gov.bd, মেন্যু থেকে ”রেজিষ্টার” এ ক্লিক করতে হবে।

তারপর রেজিস্ট্রেশন ফর্মটি পূরণ করুন। একটি ইউনিক ইউজার আইডি, মিনিমাম ৪ ডিজিটের পাসওয়ার্ড, সিকিউরিটি প্রশ্ন ও উত্তর, মোবাইল নম্বর দিয়ে শেষে ক্যাপচা পূরণ করুন।

একাউন্টটি ভবিষ্যতে আপনার কর অঞ্চল পরিবর্তন, ঠিকানা পরিবর্তন বা টিআইন সার্টিফিকেট সংশোধনের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। তাই, একাউন্টের ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড আপনার মনে রাখতে হবে বা একটি নোট খাতায় লিখে রাখুন।

ইউজারনেইমটি ইউনিক রাখার জন্য নাম এবং সংখ্যার মিশ্রণে দিতে পারেন। পাসওয়ার্ড ও নাম ও সংখ্যার মিশ্রণে দিবেন এবং এটি যেন কমপক্ষে ৮ ক্যারেক্টারের হয়।

মোবাইল ভেরিফিকেশনের জন্য, আপনার মোবাইলে একটি একটিভেশন কোড পাঠানো হবে। একাউন্ট সচল করার জন্য এটি প্রয়োজন হবে। তাই আপনার ব্যবহৃত এবং চালু আছে এমন একটি নম্বর এখানে ব্যবহার করবেন।

সঠিকভাবে ফর্মটি পূরন করা শেষে “রেজিষ্টার” বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ২- এক্টিভেশন কোড ভেরিফিকেশন

এরপর আপনার মোবাইল নম্বরে একটি ৬ ডিজিটের একটিভেশন কোড পাঠানো হবে। কোডটি দিয়ে আপনার একাউন্ট সচল করুন।

ধাপ ৩- টিন সার্টিফিকেট আবেদন ফর্ম পূরণ 

একাউন্ট চালু হওয়ার পর, উপরের লগ ইন বাটনে ক্লিক করুন। তারপর পূর্বের দেয়া ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করুন।

এখানে বাম পাশের ম্যানুগুলোর উপর থেকে, টিন এপ্লিকেশন অপশনে ক্লিক করুন।

এখানে করদাতার ধরণ বাছাই করুন। যদি বাংলাদেশের নাগরিক হন, ইনডিভিজুয়াল বংলাদেশী সিলেক্ট করুন। অন্যান্য ক্ষেত্রে আপনার ধরণ অনুযায়ী একটি অপশন বাছাই করুন।

পরের অপশনে আপনার বয়স ১৮ এর উর্দ্ধে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে, হেভিং এন আইডি অপশন বাছাই করুন। যদি, বয়স ১৮ এর নিচে হয়, মাইনর বা ডিপেনডেন্ট অপশন বাছাই করুন।

এরপর আপনার আয়ের প্রধান উৎস নির্বাচন করতে হবে। চাকরিজীবিদের ক্ষেত্রে সার্ভিস, পেশাজীবি যেমন ডাক্তার, প্রকৌশলী, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ইত্যাদি হলে প্রফেশন, ব্যবসা হলে বিজনেস নির্বাচন করুন।

এরপর আপনার চাকরী, পেশা বা ব্যবসার ধরণ বাছাই করুন। 

বিজনেস টাইপ অপশনে যদি আপনার ব্যবসা বা পেশার ধরণ খুঁজে না পান, বিজনেস লোকেশন বাছাই করবেন। লোকেশন এর ক্ষেত্রে আপনার ব্যবসায়ের অবস্থান অনুসারে এলাকাটি বাছাই করুন।

তারপর নিচের “গো টু নেক্সট” বাটনে ক্লিক করে পরে ধাপে যান।

ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা

পরের পেইজে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা চাওয়া হবে। অবশ্যই তথ্যগুলো ইংরেজিতে পূরণ করবেন। 

আপনার নাম, লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (১৭ ডিজিট) বা স্মার্ট কার্ড নম্বর (১০ ডিজিট) ও জন্মতারিখ যেন অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী হয়।

নিচের অংশে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ইংরেজিতে লিখুন। ঠিকানা লিখার পর, “গো টু নেক্সট” বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৪- টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড

এখানে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসারে দেয়া তথ্য যাচাই করা করে সকল তথ্য দেখানো হবে।

সাবমিট এপ্লিকেশন এর উপরে লাইনটি ঠিক চিহ্ন দ্বারা সিলেক্ট করুন এবং “সাবমিট অ্যাপ্লিকেশন” বাটনে ক্লিক করুন।

আপনার টিআইন সার্টিফিকেট তৈরী হয়ে যাবে এবং আপনাকে এর সকল তথ্য দেখানো হবে। পরের পেইজ থেকে ভিউ সাটিফিকেট বা সেইভ সার্টিফিকেট বাটন ক্লিক করে টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড (পিডিএফ) করতে পারবেন।

ভবিষ্যত প্রয়োজনে আপনি চাইলে এর একটি প্রিন্ট কপি রাখতে পারেন।

সচরাচর জিজ্ঞাসাঃ

টিন সার্টিফিকেট কিভাবে পাওয়া যায়?

যদি আপনার বয়স ১৮ হয়, আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে এবং আয় করে থাকেন, অনলাইনে ই-টিন রেজিস্ট্রেশন করে কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনার ই টিআইন সার্টিফিকেট পেতে পারেন।

টিন সাটিফিকেট করলেই কি আয়কর দিতে হবে?

না। টিন সার্টিফিকেট করলেই আয়কর দিতে হয় না। আয়সীমা পুরুষের ক্ষেত্রে ৩লাখ ও নারীদের ক্ষেত্রে সাড়ে ৩ লাখ টাকা আয় হলে আয়কর দিতে হবে। বাকীরা রিটার্ন দাখিল করলেই হবে। 

টিন সার্টিফিকেট করতে কত টাকা লাগে?

টিন সার্টিফিকেট করতে কোন টাকা লাগে না

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *