অনলাইনে হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন বা ডাউনলোডের নিয়ম-২০২৩

আপনি কি ঘরে বসেই হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন করতে চান? তাহলে আসুন আজ ঘরে বসে কিভাবে হারানো ভোটার আইডি কার্ড হাতে পেতেহয়, তা হাতে কলমে শিখিয়ে দিবো।

ভোটার আইডি কার্ড (এন আইডি কার্ড) বা জাতীয় পরিচয়পত্র গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র খুবই গুরুত্বপূর্ন। জাতীয় পরিচয় পত্র কোন ব্যক্তির জাতীয়তা বা নাগরিত্বের প্রমাণ। প্রায় সকল সরকারী ও  বেসরকারী কাজে এন আইডি ব্যবহার করতে হয়।

চাকুরীতে যোগদান থেকে শুরু করে পার্সপোর্ট, জমি ক্রয় বিক্রয়, মামলা মোকাদ্দমা, ব্যাংকে লেনদেন, ভর্তি, বিদেশ যাত্রা, যে কোন ট্রেনিং এর ভর্তি এরকম নানাবিধ কাজে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয়। বর্তমান সরকার দেশের সর্বোস্তরের জনগণেকে সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা প্রদানে স্মার্ট কার্ড বিতরণ এবং বৈধতা নিশ্চিত করছে। 

কিন্তু দেখা যায় অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রে হারিয়ে ফেলার কারণে নানাবিধ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে থাকে জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য, জাতীয় পরিচয় পত্রের মূলকপি ছাড়া অনেক কাজই বাধাগ্রস্থ হয়। তাই নষ্ট হওয়া বা হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন বা ডাউনলোডের জন্য আমাদের আজকের পোস্ট।

নিজেই নিজের নষ্ট হওয়া বা হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন করতে পারবেন। ঘরে বসে ১০ থেকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ঘরে বসেই নিজের হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন করতে এই পোস্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে।

হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন 

সরকারিভাবে নাগরিকদের ২০০৮ সাল থেকে ন্যাশনাল আইডি কার্ড বিতরণ শুরু হয় যা পরবর্তীতে স্মার্ট কার্ডে রুপান্তিত করে বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। শুরুর দিকে মানুষজন ভোটার আইডি কার্ড এর গুরুত্ব বুঝতে না পেরে এবং অসাবধনতা বশতঃ অনেকেরই ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকের ভোটার আইডি কার্ড যত্ন সহকারে না রাখায় কার্ডটি নষ্ট হয়ে গেছে। আবার অনেকের ঘর চুরি, মানিব্যাগ চুরি ইত্যাদি কারণে ভোটার আইডি কার্ডটি আর খোজ পাচ্ছেন না। ফলে নানা সময়ে নানা ধরণের অসুবিধায় পড়তে হয়।  

আপনার যদি শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ জানা থাকে, তাহলে আজকের এই পোস্টটি পড়ার পর কারো সহযোগিতা ছাড়া ঘরে বসেই নিজের হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন করতে পারবেন। 

কিন্তু আপনার কাছে যদি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ না জানা থাকে তাহলে প্রথমে আপনার উপজেলা নির্বাচনী অফিস হতে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ জেনে নিতে হবে। তারপর আপনাকে আবেদন করতে হবে। 

নষ্ট বা হারানো ভোটার আইডি উত্তোলনের জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন

হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলনের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর উল্লেখপূর্বক প্রথমে থানায় একটি জিডি করতে হবে এবং তা স্ক্যান করে কম্পিউটারে রাখতে হবে। আর নষ্ট হয়ে যাওয়া আইডি কার্ড উত্তোলনের জন্য নষ্ট হওয়া আইডি কার্ডের স্ক্যান কপি সংযুক্ত করলেই হবে।

অনলাইনে হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলনের আবেদন করার নিয়ম 

অনলাইনে হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলনের জন্য  এন আই ডি এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট services.nidw.gov.bd এ প্রবেশ করে নিজের এনআইডি নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে প্রোফাইল বা একাউন্ট রেজিষ্টার করতে হয়। 

অনলাইনে হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলনের এর ধাপ সমূহঃ

ধাপ-১: প্রোফাইল বা একাউন্ট রেজিষ্টার করা।

ধাপ-২: তথ্য এডিট।

ধাপ-৩: ফি প্রদান।

ধাপ-৪: প্রমাণপত্র / ডকুমেন্ট আপলোড।

ধাপ-৫: আবেদন সাবমিট।

ধাপ-১: প্রোফাইল বা একাউন্ট রেজিষ্টার করা।

নষ্ট বা হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলনের এর জন্য প্রথমে services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে রেজিষ্ট্রেশন করুন অপশন সিলেক্ট করে নিজের এনআইডি নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে তারপর ক্যাপচা সমাধান করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।

জাতীয় পরিচয় পত্রে দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা সিলেক্ট করতে হবে। তারপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করে নিজের সচল নাম্বারটি টাইপ করে “বার্তা পাঠান” বাটনে ক্লিক করলে আপনার মোবাইলে একটি এসএমএস এর মাধ্যমে ওটিপি প্রদান করা হবে।

হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন

ওটিপিটি নিদিষ্ট স্থানে ইনপুট করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করলে নিচের দেয়া ছবিটির মতো “কিউ আর কোড” আসবে। 

এবার নিজের এন্ডয়েড ফোনের প্লে-স্টোরে গিয়ে “NID WALLET” লিখে সার্চ দিলে সবার উপরে যে অ্যাপসটি আসবে সেটি একটিভ করে নিতে হবে। তারপর সে অ্যাপসে ঢুকে কিউ আর কোডটি স্ক্যান করলে অ্যাপসটির মাধ্যমে ফোনের সেলফি ক্যামেরা ওপেন হবে এবং যা দিয়ে আপনার ফেইস ভেরিফিকেশন করতে হবে।

এবার আপনার মোবাইলে ইনস্টল করা NID Wallet অ্যাপসটি ওপেন করুন। ভাষা সিলেক্ট করে Agree and Continue বাটনে ট্যাপ করুন। এরপর QR কোডটি স্ক্যান করুন।

QR কোড স্ক্যান করার পর আপনার Face Verification করার অপশন আসবে। এখানে সোজাসুজি ছবি তুলবেন, তারপর চোখ ক্যামেরার দিকে রেখে মাথা একটু বামে ও ডানে ঘুরাবেন।

ফেইস স্ক্যান চালু করার জন্য Start Face Scan বাটনে ক্লিক করুন।

অ্যাপ এ দেখানো ভিডিওর মত, আপনার মুখ বরাবর Selfie Camera ধরুন ও সোজাসুজি তাকান। ঠিক থাকলে ছবিতে OK বা টিক চিহ্ন উঠবে।

তারপর, ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আপনার মাথা ডানে একবার ও বামে একবার ঘোরাবেন। ঠিক চিহ্ন না দেখালে, আবার চেষ্টা করুন।

হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন

ফেইম ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে আপনার সামনে নিচের মত একটি পেইজ আসবে।

এবার আপনার “পাসওয়ার্ড সেট করুন” বাটনে ক্লিক করে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড প্রদান করুন। ভবিষ্যতে ফেইস ভেরিফিকেশন ছাড়া একাউন্টে প্রবেশ করতে হলে, আপনাকে সেট পাসওয়ার্ড বাটনে ক্লিক করে একটি পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে এবং আইডি পাসওয়ার্ডটি মনে রাখুন বা কোথাও নোট করে রাখুন।

হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন

Password না দিতে চাইলে এড়িয়ে যান বাটনে ক্লিক করে আপাতত কাজ সম্পন্ন করার যাবে। পরামর্শ থাকবে পাসওয়ার্ড সেট করার জন্য। ভবিষ্যতে জাতীয় পরিচয়পত্র পুনরায় উত্তোলন বা কোন সংশোধন হওয়ার পর ডাউনলোড করার জন্য আপনার একাউন্টে প্রবেশ করতে হবে।

হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন

ধাপ ২: তথ্য এডিট

সফলভাবে একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন হলে, আপনার একাউন্টে লগ ইন করবেন। তখন, আপনার সামনে নিচের মত একটি পেইজ আসবে।

এখানে রিইস্যু অপশনে যান। রিইস্যু অপশনে যাওয়ার পর উপরের এডিট অপশনে ক্লিক করুন। তারপর এখানে পুনঃমুদ্রনের কারণ বাছাই করুন।

যদি “হারিয়ে গেছে” বা “ চুরি হয়েছে” সিলেক্ট করে থাকেন তাহলে এর পাশের ঘর গুলোতে অবশ্যই জিডি নাম্বার, থানার নাম, দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারের নাম, জিডির তারিখ ইত্যাদি উল্লেখ করুন। তারপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৩: ফি প্রদান

এখন, আপনাকে আপনার সরকারী নিয়ম অনুযায়ী অনুযায়ী ফি প্রদান করতে হবে। ফি প্রদান ছাড়া আবেদনের বাকি কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। তাই বর্তমান পেজটি ক্লোজ করবেন না।

এনআইডি এর সবধরণের ফি রকেট, বিকাশ, ওকে ওয়ালেট থেকে খুব সহজেই পরিশোধ করা যায়।

জাতীয় পরিচয়পত্র ফি জমা দেওয়ার নিয়ম

হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলনের জন্য ২৩০টাকা ফি প্রদান করতে হয়।

বর্তমানে মোবাইল ব্যাঙ্কিং এর মধ্যে বিকাশ সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করছে এবং সকলেরই বিকাশ একাউন্ট আছে। তাই আজ বিকাশ অ্যাপসের মাধ্যমে কিভাবে এনআইডি ফি পরিশোধ করা যায় তা হাতে কলমে দেখি দিচ্ছি।

বিকাশের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফি প্রদান

বিকাশের মাধ্যমে ফি দিতে বিকাশ অ্যাপ থেকে আপনার বিকাশ একাউন্টে লগ ইন করুন এবং নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

  1. পে বিল অপশনে যান
  2. সরকারি ফি অপশনে ক্লিক করুন এবং NID Service অপশনটি বাছাই করুন।
  3. আপনার আইডি নম্বরটি ইংরেজিতে লিখুন
  4. আপনার আবেদনের ধরণ (Duplicate Regular) বাছাই করুন।
হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন

এরপর আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন নম্বর দিয়ে ফি পরিশোধ কনফার্ম করুন। ফি পরিশোধ করা হলে আপনাকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ওয়েবসাইটে আবার ফিরে যেতে হবে এবং বিতরণের ধরণ সিলেক্ট করে উপরের ডান পাশের “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করতে হবে।

ধাপ ৪: প্রমাণপত্র / ডকুমেন্ট আপলোড ও আবেদন সাবমিট

আপনার সকল ডকুমেন্টস বা প্রমাণপত্র সমূহ স্ক্যান করে একটি ফোল্ডারে রাখতে হবে। তারপর প্রয়োজন মোতাবেক আপনার ডকুমেন্ট গুলো আপলোড করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করে আবেদন সাবমিট করতে পারবেন।

ধাপ ৬: হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন আবেদন ফরম ডাউনলোড

আবেদন সাবমিট করার পর, আবারো প্রোফাইলে ফিরে এসে উপরের দিকে আবেদনটি “ডাউনলোড” লিখা বাটনে ক্লিক করে হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র উত্তোলনের আবেদন ফরম ডাউনলোড করে নিজের কাছে সংরক্ষণ করুন। মনে রাখবেন আবেদন করার পরপরই এটি ডাউনলোড করতে হয়। কিছুদিন গেলে এটি আর ডাউনলোড করা যায় না।

শেষ কথা

এবার আপনার হারানো এনআইডি উত্তোলন আবেদন অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আপনাকে কোথাও যেতে হবে না। যদি আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে ডকুমেন্টস কম হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানানো হবে যে, আপনি আর কোন কোন ডকুমেন্টস সংযুক্ত করতে হবে। তখন আপনি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আবার লগ ইন করে ডকুমেন্টসগুলো আপলোড করতে পারবেন। আর সংশোধন আবেদন অনুমোদিত হলে আপনি লগ ইন করে হোম পেজের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে আপনার সংশোধিত জাতীয় পরিচয় পত্র প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করতে পারবেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করার নিয়ম-২০২৩

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করার নিয়ম-২০২৩

হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলন সম্পর্কিত প্রশ্নসমূহ

ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে কি করব?

ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে, আপনার নিকটস্ত থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে, হারানো ভোটার আইডি কার্ড উত্তোলনের জন্য আবেদন করুন।

জাতীয় পরিচয় পত্র হারিয়ে গেলে কিভাবে উঠাতে হয়?

আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে, প্রথমে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে হবে। এরপর ডায়েরী (জিডি) কপি আপলোড করে অনলাইনে আইডি কার্ড রিইস্যুর আবেদন করতে হবে। আবেদন অনুমোদন হওয়ার সাথে সাথেই অনলাইন থেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *